সুমাইয়া বেগম

সুমাইয়ারা মরে না, মরে আমাদের বিবেক-মনুষ্যত্ব-মানবিকতা

যেকোন দূর্যোগে মানুষ নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। করোনায় মানুষ জীবন-জীবিকা হারিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, জীবিকা হারিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরূপ পরিস্থিতিতে বয়স্ক-যুবক-তরুণ-কিশোর-ভিন্নভাবে সক্ষম সকল শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ, ছেলে-মেয়ে, শিশুরা গৃহে বন্দী। সাধারণত দুর্যোগ পরিস্থিতিতে মানুষ মানবিক হয়ে ওঠে। একজন অপরজনকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রথমে ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষ, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিশুদেরকে রক্ষা জন্য আমরা চেষ্টা করি। আরো মানবিক হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এই চিন্তা আসলে ক’জন মানুষের মাঝে আছে? অনেকে বলবেন, অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই আছে। কেউ হয়তো বলবেন, বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে নেই। কোনটি সত্য, বুঝা মুশকিল। দুর্যোগে আমরা কেন মানবিক হতে পারছিনা না। এর কারণ কি অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা? সাংস্কৃতিক দৈন্যতা, মানবিকতা- মনুষ্যত্বের অভাব, নাকি শোষণ-লুণ্ঠন? আমি বলবো,  শোষণ-লুষ্ঠনই প্রধানত দায়ি। তারই অনুষঙ্গ বাকীগুলো।

আজ যদি সুমাইয়া বেগমের কথা ধরি, সে তো সমাজের একজন নাগরিক। মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল, নিজের উর্পাজনের উপর ভিত্তি করে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু আসলে  দেশের নাগরিক হিসেবে, সমাজের একজন মানুষ হিসেবে কি বাঁচতে পারল? আমরা কি মানবিক হতে পারলাম? অন্যের মর্যাদার সাথে বাঁচার লড়াইকে কি সম্মান করতে পারলাম? সুমাইয়াদের মত হাজারো মেয়েকে বা নারীকে সমাজ-সরকার-রাষ্ট্র মানুষ হিসেবে কি দেখে? দেখতে পায়? পারে না, দেখে না। কারণ এই সমাজে নারী-পুরষের মধ্যে যে বৈষম্য পরিবারে-সমাজে-আইনে টিকে রয়েছে, চর্চা হয় বা হচ্ছে সেজন্য সুমাইয়া বেগম যত শিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত হোক না কেন, সে নারী, সে মানুষ নয়।  সেজন্য সুমাইয়াদের মৃত্যু হয়। বাঁচার মতো বাঁচতে চাওয়ার অধিকার ক্ষুন্ন হয়। আসলে সুমাইয়ারা মরে না, মরে আমাদের বিবেক-মনুষ্যত্ব-মানবিকতা।

লেখক: মর্জিনা খাতুন, নারী অধিকার কর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *