স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব -মর্জিনা খাতুন, নারী অধিকার কর্মী

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত ৫ জুন ২০২৪। টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ২০২৪ সৈ¦রাচারি হাসিনা সরকারের পতন হয়।  শুরুতে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও ১৫ জুলাই ২০২৪ ছাত্রলীগ-যুবলীগ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালায়। ছাত্রদের উপর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নিরস্ত্র আবু সাঈদের মৃত্যু ছাত্র সমাজ মেনে নেয়নি। আবু সাঈদ সহ সেদিন ৬ জনের তাজা প্রাণ ঝরে পড়েছিল। তাদের শহীদি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন/কোটা সংস্কার আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। যুক্ত হয় ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক-আইনজীবী-ফটোগ্রাফার- শিল্পী-সাহিত্যিক-লেখক-কবি-নাট্যকার-নারী-শিশু-দিনমজুর-রিকশাচালক সহ সর্বস্তরের মানুষ। এই আন্দোলন জনতার   স্বৈরাচারি শাসন থেকে মুক্তির আন্দোলন। ৩৬ দিনের আন্দোলনে ৪৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। হাজার হাজার মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ১২,০০০। এত অল্প সময়ে এত ব্যাপক প্রাণহানি উপমহাদেশের ইতিহাসে ১০০ বছরেও ঘটেনি বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

এই আন্দোলনের সবচেয়ে  উল্লেখযোগ্য দিক ছিল নারী ও ছাত্রীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। প্রতিবাদে-প্রতিরোধে বিশ^দিবদ্যালয়ে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ, সাংস্কৃতিক প্লাটফর্মে নারীদের অংশগ্রহণ, শিক্ষকদের প্রতিবাদে নারী শিক্ষকদের নির্ভয় উপস্থিতি এবং মায়েদের  অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যখন নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকে, তখন বুঝতে আর বাকী থাকে না যে, এ আন্দোলনের জয় অনিবার্য। এ আন্দোলনে যে মা তাঁর সন্তানকে হারিয়েছেন, যে কন্যা পিতাকে হারিয়েছেন, যে  বোন তাঁর ভাইকে হারিয়েছেন, যে ভাই তার বোনকে হারিয়েছেন, যে পিতা তাঁর কন্যাকে হারিয়েছেন, যে তারুণ্য তাঁর অতি প্রিয় বন্ধুকে হারিয়েছেন, তাঁদের সকলের কান্না এক বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছিল। ফলে পুলিশ ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে যে মেয়েটি প্রতিবাদ করছে, সে বীরকন্যার ভূমিকা পালন করেছে। যে মেয়েটি স্লোগানে মিছিল প্রকম্পিত করেছে, সে বীর কন্যার ভূমিকা পালন করেছে। যে মেয়েটি মিছিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর জন্য নিজে গুলির তোয়াক্কা করেনি, সে বীর কন্যার ভূমিকা পালন করছে। ঘরে ঘরে বীরকন্যারা জাগ্রত ছিল। বীরকন্যার সন্তানরা ছিল জাগ্রত। ফলে জুলাই হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। মানুষ এটাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছে। এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে নারীরা আবারও প্রমাণ করল যে বিজয় অবসম্ভাবী যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। এই ঐক্যবদ্ধ লড়াই সবার মুক্তির জন্যই প্রয়োজন। তবে এই মুক্তি আমরা তখনই পাবো, যখন আমাদের আকাংখার পরিপূরক শাসন ব্যবস্থা পাব। এই শাসনব্যবস্থা নারী-পুরুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আসবে।

error: Content is protected !!